দেওয়ানগঞ্জ প্রতিনিধি :
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় উপস্থিত না হয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা গ্রহণ করার অভিযোগ উঠেছে ।
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে পড়ালেখা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ। প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের বাহাদুরাবাদ এরব সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রী সহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনি বিগত ৫/ ৬ মাস থেকে মাদ্রাসায় আসেন না । মাদ্রাসার অফিস চলাকালিন সময়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌর বাজারের নিদ্রিষ্ট কিছু স্থানে তাকে নিয়োমিত ঘুরাফেরা করতে দেখা যায় ।
মাদ্রাসায় না গেলেও দুরে থেকে তার অনুগত কিছু শিক্ষকদের মধ্যমে অফিশিয়াল কাগজ পত্র আপডেট রাখেন ।এমনকি বিগত কয়েক মাস থেকে তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় তিনি নিয়মিত উপস্থিত। অধ্যক্ষের হাজিরার ঘরে তিনি নিয়মিত স্বাক্ষর করে রেখেছে ।
এই ব্যাপারে তথ্য নিতে সেই মাদ্রাসায় গেলে ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে সাংবাদিক দেখে কেটে পড়ার চেষ্টা করে। কিছু শিক্ষকরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ রাখে, দীর্ঘ এক ঘন্টা পর কয়েকজন ছাত্রছাত্রী সাহস করে ক্যামেরার সামনে এসে বক্তব্য প্রদান শুরু করলে, তাদের দেখাদেখি আরো অনেক ছাত্রছাত্রী সাহসী হয়ে কিছু বলার জন্য ক্যামেরার সামনে এসে মুখ খোলে ।মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্র সাইমুম তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ফজলুল হক জানায়, তাদের প্রিন্সিপাল ৫ মাস থেকে মাদ্রাসায় আসেনা।
একই মাদ্রাসার ৯ শ্রেণীর ছাত্রী রোজিনা আক্তার ,সানজিদা কামরুন্নাহার সহ অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তাদের অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় আসেন না, তাদের পড়ালেখার বহু ক্ষতি হচ্ছে, ঠিকমত ক্লাশ হয়না, টিফিনের পর ছুটি হয়ে যায়, এরপরের কোন ক্লাশ হয়না ।সামনে বার্ষিক পরিক্ষা তাদের পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে ।তারা এর আশু সমাধান চায় । এলাকাবাসী সহ মাদ্রাসার ব্যবস্থাপা কমিটির সাবেক সদস্যগন জানান, অধ্যক্ষের দলভুক্ত কয়েকজন শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি দুরে বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন ।তার পূর্বের অনুপস্থিতির স্বাক্ষরবিহীন হাজিরা খাতার সাদাপাতার ছবি তুলে রেখেছেন তারা।
স্থানীয় গণ্যবান্য ব্যাক্তিবর্গ আলহাজ আবু বকর সিদ্দিক, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা পরিবারের সদস্য একরামুল হক (চানমিয়া ) সাবেক ইউপি মেম্বার শাহজাহান আলী, মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সহ অনেকের অভিযোগ "সেই অধ্যক্ষ যে মাদ্রাসায় আসেনা সেটা হাজার হাজার লোক জানে, সে একজন দুর্নীতিবাজ, তার দুর্নীতির জন্য এলাকাবাসী একজোট হয়েছে তাকে আমরা রাখতে চাই না, তাকে আমরা আর এখানে আসতে দিব না , অধ্যক্ষ তার দুর্নীতি জায়েজ করার জন্য বার বার তার পছন্দের ব্যাক্তিকে সভাপতি বানিয়ে নিয়ে আসে এবং মাদ্রাসার আয় ব্যায়ের কোন হিসাব দেয়না, এই অধ্যক্ষ মাদ্রাসাকে ধ্বংস করেছে" দীর্ঘদিন থেকে অধ্যক্ষ নিয়ে এলাকাবাসীর দ্বন্দ্বের কারণে এর আগেও শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ইউনুস আলীর অপসারণ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল। অধ্যক্ষের ব্যাপারে মাদ্রাসার কোন শিক্ষক ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি, তবে তারা বলেন আমরা জিম্মি হয়ে আছি কি বলব ? আপনারা তথ্য নেন বহু কিছু পাবেন।
মাদ্রাসার আরেক সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা ইউনুস আলী ভয়ে ভয়ে বলেন, আমি একবার প্রতিবাদ করেছিলাম আমার বিল বেতন আটকায়ে রাখছে তার আর কিছু বলতে চাইনা। উপজেলা মাধ্যমিক অফিসের একাউন্টেন্ট আব্দুল হাই বলেন, সেই অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় যায় না এটা সত্য এর একটা সমাধান দরকার।
মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান সভাপতি মো. আব্দুর রহিম (মিঠু ) অধ্যক্ষের মাদ্রাসায় না যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে কালের কন্ঠকে বলেন, তারা সবাই বিএনপি জামায়াতের লোক , এমপির ডিও লেটারের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতিকে মাদ্রাসায় ডুকতে দেয়না, সেখানে যারা এসব করছে সেখানে কোন আওয়ামীলীগের লোক আছে ? ইতিপূর্বে আমাকে সহ অধ্যক্ষকে তারা লাঞ্চিত করেছে, তাই তার নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ রেখেছি।
অধ্যক্ষকে যদি নিরাপত্তা দেওয়া হয় সে আজি যাবে সেখানে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফা আখতার বলেন, আমি মিডিয়া মাধ্যমে অবগত হলাম । তিনি মাদ্রাসায় না গিয়েও হাজিরা খাতা সই করেছেন এটা মারাত্মক অপরাধ। তিনি আমাকে জানাতে পারতেন, অথবা থানায় জিডি করতে পারতেন তিনি কাউকে কিছুই বলেন নাই, তিনি আমাদের কে পাত্তাই দেন না । তবে আমি তদন্ত করে বিস্তারিত জানাব।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, আমি নতুন এসেছিল বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানিনা আমাকে একটু সময় দিন আমি বিস্তারিত জেনে তারপর বলব ।