স্টাফ রিপোর্টার:
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদে অসময়ে হঠাৎ দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বেশকিছু দিন ধরে চলা অব্যাহত নদী ভাঙনে ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি, হুমকির মুখে বসতভিটাসহ অন্যান্য স্থাপনা। ক্ষতিগ্রস্থদের দাবী এখনই জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেবে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিক বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে, স্থায়ী বাঁধের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ হঠাৎ যেন আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। রাত-দিন অবিরত ভাঙছে নদের পাড়। শুষ্ক মৌসুমে নদের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলেও ভাঙন শুরু হওয়ায় হতবাক স্থানীয়রা। গত দুই মাস ধরে চলা ভয়াবহ ভাঙনের কবলে নদের প্রায় এক কিলোমিটার তীর বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী চরের কয়েকশ হেক্টর ফসলি জমিতে আবাদ করা হয়েছিলো ভুট্টা, মরিচ, বাদামসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসল, যা ভাঙনের কবলে চলে গেছে নদীগর্ভে। তাই চাষ করা এসব ফসলের যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে সংশয়। তাছাড়া কৃষি ঋণ নিয়ে ফসল চাষাবাদ করায় দেনা পরিশোধ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে কৃষকদের মাঝে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, নূর হালিম, মালেকাসহ কয়েকজন জানান, শীতের এই শুষ্ক মৌসুমে এমন নদী ভাঙনের চিত্র তারা কখনোই দেখেননি। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে ফসলি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়বে চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাদহপাড়া গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী কয়েক হাজার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অন্যান্য স্থাপনা ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সামনের বর্ষা মৌসুমে বন্যা দেখা দিলে নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে, তখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও হবে অনেক।
নদের আকস্মিক ভাঙন ঠেকাতে ও ফসলি জমি, ঘরবাড়ি রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয়রা। তারা নিজেদের উদ্যোগে এলাকার বাসিন্দাদের সহায়তায় ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বালির বস্তা, বাঁশের খুটি দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আলী একাব্বর, ইমরানসহ আরও বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, নিজেদের শেষ সহায় সম্বল রক্ষায় তারা নিজেরা এলাকাবাসীর নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ও নিজেদের শ্রমে বস্তায় বালি ভরে ও বাঁশের খুটি পুতে ভাঙন ঠেকানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তাদের এই উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসছে না, একদিকে বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করলে অন্যদিকে আবার ভাঙন শুরু হচ্ছে। তাই স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে সরকারকে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী ক্ষতিগ্রস্থদের।
চর আমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া জানান, দুই মাসের ভাঙনে বহ্মপুত্রের তীরবর্তী ৫শ হেক্টরের বেশী ফসলি জমি ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি ও অর্থকরী ফসলের জমি হুমকির মুখে পড়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার তীর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম জানান, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন কবলিত অংশে ভাঙন রোধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে, যা অনুমোদন হলে পাড় প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হবে। তাছাড়া স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধের জন্য প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে, প্রকল্পটি অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
অসময়ে নদী ভাঙন আর ভাঙনের শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে। নদীপাড়ের মানুষের শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।