জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি, একাত্তর টিভি ও বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার প্রায় একবছর হলেও মামলার অন্যতম আসামি ফাহিম ফয়সাল রিফাতকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
এদিকে মামলাটির ৫ নম্বর আসামিসহ কয়েকজন জামিনে এসে নিহত নাদিমের স্ত্রী ও পরিবারকে হুমকি ও মামলা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসব অভিযোগ করেন।
২৭ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টায় জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে জামালপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
হত্যা মামলাটির বাদী ও নিহতের স্ত্রী মনিরা বেগম অভিযোগ করেন, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার ২ নম্বর আসামি ফাহিম ফয়সাল রিফাত পুলিশের ভাষায় পলাতক থাকলেও সে বিয়ের দাওয়াতে অংশগ্রহণসহ প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ৫ নম্বর আসামি গাজী আমর আলী মেম্বারসহ কয়েকজন জামিনে এসে বাদী ও তার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে মামলার কার্যক্রম ব্যাহতসহ তিন সন্তান নিয়ে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি প্রশাসনের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা, সকল আসামিকে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি সাংবাদিক শওকত জামান। সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জাকারিয়া জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, কোষাধ্যক্ষ কাফি পারভেজ, দৈনিক সচেতনকণ্ঠের সম্পাদক বজলুর রহমান, বাংলারচিঠি ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মনজু, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক মুক্তা আহমেদ, জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান, সরিষাবাড়ী রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা বলেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি মোখলেছুর রহমান পান্না নাদিম হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বাবুর চাচাতো ভাই হওয়ার সুবাদে মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি মামলাটি সিআইডি থেকে প্রত্যাহার করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সকল হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানান।
জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি জেলখানায় জামাই আদরে রয়েছে। জামিনে থাকা আসামিরা বাদীর পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বাদীর পরিবারকে নিরাপত্তা ও ১ নম্বর আসামিকে দেশের অন্যকোনো জেলখানায় স্থানান্তরের দাবি জানান।
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত জামান বলেন, মামলার তদন্তকারী সিআইডি পুলিশ শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিলের চেষ্টা করছে। ভিডিও ফুটেজের বাইরে মূল হত্যাকারী মাহমুদুল হাসান বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাতকে বাঁচানোর অপচেষ্টা চলছে। আইনমন্ত্রী মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
উল্লেখ্য, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে গত বছরের ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (বরখাস্তকৃত) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবু ও তার সহযোগীদের হাতে নির্মমভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। পরদিন ১৫ জুন বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এরপর ১৭ জুন সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এজাহারভুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ১ নম্বর আসামিসহ ৫ জনকে র্যাব গ্রেপ্তার করলেও অধিকাংশই পুলিশের কাছে পলাতক।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম কিবরিয়া মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, মামলার তদন্তকাজ শেষের দিকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হবে। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা ঠিক হবে না। তবে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জামালপুর ট্রিবিউন/ আবু সাঈদ
0 মন্তব্যসমূহ