জামালপুর ট্রিবিউন ডেস্ক:
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে টেকসই উপায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, সরকার ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) দু’টি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। কমিটিগুলোকে ডেঙ্গু মোকাবেলায় একটি গবেষণা ভিত্তিক রূপরেখা জমা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক এলজিআরডি ও সমবায় উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফের সঙ্গে বৈঠকের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির মধ্যে প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার বিশেষ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সরকার ডিএসসিসি ও ডিএনসিসিতে দু’টি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।
এএফ হাসান আরিফ বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা উন্নত দেশের মতো গবেষণাভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করছি।
উপদেষ্টা বলেন, তারা চিকিৎসা ও সচেতনতা সৃষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি রোধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস'র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এবছরের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ২১ জন এবং মারা গেছেন ৩৭২ জন।
গত বছর, দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১ হাজার ৭০৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
ডিএসসিসিতে গঠিত ছয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞকমিটি কার্যকর উপায়ে রাজধানীর ডেঙ্গুর ঝুঁকি মোকাবেলার পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কাজ করছে।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বাসসকে বলেন, কমিটি প্রায় সাড়ে চার সপ্তাহ আগে প্রথম বৈঠক করে এবং বিশেষজ্ঞদের ডিএসসিসিকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছিলো।
মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ডিএসসিসি কাজ করছে।
শামসুল বলেন, 'আমরা ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করার জন্য দু’টি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করতে কাজ করছি।
তিনি বলেন, 'স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করবো।’
তবে তিনি বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় তাদের ১ হাজার ৫০ জন কর্মী নিয়মিত মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সপ্তাহে তিন থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণের হার কমিয়ে আনবে।
ডিএসসিসির বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য হলেন- ডিএসসিসির প্রশাসক (অতিরিক্ত সচিব) মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ আলম, বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শেফালী বেগম, ঢাবির চিকিৎসা কীটতত্ত্ববিদ ড. তানজিন আক্তার এবং ড. ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মিজানুর রহমান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন এলাকায় কীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে ছয় সদস্যের আরেকটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে ডিএনসিসির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা হলেন- শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. রাশেদুল ইসলাম, নিপসম-এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. গোলাম সারওয়ার, কীটতত্ত্ববিদ মো. রেজাউল করিম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার ডা. জেনারেল ইমরুল কয়েস এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলম।
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে ডিএনসিসির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে প্রথম বৈঠক করে এবং আমরা তাদের কাছ থেকে আরও কার্যকর উপায়ে ডেঙ্গু মোকাবেলায় কিছু পরামর্শ পেয়েছি।
ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণের জন্যে আমরা একটি কার্যকর সমাধান খুঁজতে তাদের দক্ষতাকে কজে লাগাতে চাই।
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সঙ্গে মশাবাহিত রোগের ওপর একটি পৃথক জরিপ পরিচালনার পাশাপাশি মানসম্মত কীটনাশক এবং নিখুঁত ডোজ ব্যবহার নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন।
মাহমুদুল হাসান বলেন, তারা ডিএনসিসি এলাকায় প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে নিয়মিতভাবে ১ হাজার কর্মী দিয়ে লার্ভিসাইডিং ও অ্যাডাল্টিসিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র: বাসস।
0 মন্তব্যসমূহ